**ফ্রিলেন্সাদের জন্য থাইল্যান্ড এবং সিঙ্গাপুরে টুরিস্ট ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া এবং খুঁটিনাটি - **
বাংলায় ফ্রিল্যান্সাদের টুরিস্ট ভিসা নিয়ে বিস্তারিত কোন কন্টেন্ট চোখে পরেনি। ব্যাপারটা নিয়ে একটু ধোঁয়াশা আছে। ১৮ দিনের সিঙ্গাপুর এবং ব্যাংকক টুর শেষে গত ৪ দিন আগে দেশে এলাম। **দুই এম্বাসিতে সকল কাগজে খুব পরিষ্কার করে লিখে দিয়েছিলাম আমি একজন ফ্রিলেন্সার।** একটু হয়রানী স্বীকার হয়েছিলাম বলেই ভাবলাম ডকুমেন্ট এবং আবেদিন প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত লিখব। এই লিখা থেকে কারো উপকার হলে কমেন্ট করে জানাবেন প্লিজ। ওকে
**থাইল্যান্ড এবং সিঙ্গাপুর।** দুটি দেশই আমার প্রথম ভ্রমণ। ফ্রিলেন্সাদের কাগজে নিয়ে ঝামেলা বলে বেশিবভাগ এজেন্সি ফাইলিং এর ব্যাপারটা বুঝে না। রিস্ক নিব না বলেই গেলাম প্রথম সারির ট্রাভেল এজেন্সিতে। বনানীতে টিপ টপ অফিস দেখে খুশি হয়েছিলাম। একজন ভিসা স্পেশালিষ্ট এর সাথে কথা শুরু করলাম। ভয়াবহ রকম দুঃখজনক ব্যাপার হল ৪০ মিনিটেও আমি উনাকে বুঝাতে পারলাম না আমি একজন ফ্রিলেন্সার, আমার ইনকাম, ট্রান্সাফার প্রসেস, কাগজপত্র সব ভ্যালিড। বাংলাদেশের সব এজেন্সির ফাইল প্রসেসিং এর জন্য ক্যাটাগরি দুইটা। হয় চাকুরীজীবী বা ব্যাবসায়ী। এর বাইরে কাজের কোন ক্যাটাগরি হতে পারে এটা তাদের জ্ঞানের বাইরে! ৪০ মিনিট ভদ্রমহিলা আমার সকল কাগজ চেক করল, এর ভেতর সরাসরি এবং ফোনে ২/৩ জনের সাথে কথা বলল। একটা সময় পর যেটা বুঝলাম, তারা চাচ্ছে আমার ফাইলের প্রেজেন্টেশন টা হবে এমন - আমি ফাইবার কিংবা আপওয়ার্ক এর একজন কর্মচারী। মাস শেষে বেতন পাই। অর্থাৎ দিন শেষে আমি একজন চাকুরীজীবী।
ফ্রিলেন্সিং এর ফাইলিং এর ব্যাপারে আইডিয়া নেই এটা কোন দোষ না। মুল কষ্টটা অন্য জায়গায়। বুঝতে না পেরে ভদ্রমহিলা এক পর্যায়ে উনার ম্যানেজার এর সাথে ফোনে কথা বলিয়ে দিয়েছিলেন। উনি জিজ্ঞাসা করলেন ইনকামের কি কি কাগজ আছে। বলেছিলাম পেনিয়ের এর স্টেটমেন্ট, ব্যাংক স্টেটমেন্ট। ফোনে থেকেই উনি পাশের এক লোকের সাথে এই ব্যাপারে কথা বললেন। পাশের লোকটা জিজ্ঞাসা করেছিল পেয়নিয়ার? এটা আবার কি জিনিষ। ম্যানেজার একটু তাচ্ছিল্য করে জবাব দিলেন - ওই ফ্রিলেন্সাদের টাকা পয়সা না কি আসে এইটা দিয়ে। **বিকাশ-টিকাশের** মত হবে আর কি কিছু একটা। একজন ম্যানেজার লেভেলের মানুষ থেকে এইটাইপের কিছু আশা করিনি। বাংলাদেশের একটা শ্রেণীর মানুষ ফ্রিলেন্সিং জিনিষটাকে এখনো খুব ছোট কাজ হিসাবে দেখতে পছন্দ করে।
মুল প্রসঙ্গে আসি। আরও ২/৩ টা এজেন্সিতে গিয়ে দেখালাম ব্যাপারটা প্রায় একই রকম। ঠিক করলাম নিজেই এপ্লাই করব। কমিউনিটির একজন পরিচিত মুখ Saiful Islam Sohel ভাই। উনার সাহায্য নিলাম। থাইল্যান্ডের ফ্রিলেন্সার ভিসা নিয়ে উনার একটা আর্টিকেল আছে। কমেন্টে লিঙ্ক দিয়ে দিব।
আপওয়ার্ক এ আমার প্রায় ৩০০০ ঘণ্টা কাজের এক্সপেরিয়ান্স আছে। শুধুমাত্র যাচাই করার জন্য ঠিক করলাম দুই এম্বাসি তে দুই টাইপের কাগজ দেব। আপনি ফ্রিলেন্সার হিসাবে এপ্লাই করলে বেষ্ট সাজেশন হবে নিজে নিজে এপ্লাই করবেন।
**থাইল্যান্ড এম্বাসি **
১। থাইল্যান্ড এম্বাসির বাংলাদেশ অফিসিয়াল সাইটে একটা ভিসা ফরম আছে। ওইটা ফিলেবল পিডিএফ। এইটা ফিলাপ করে প্রিন্ট দেবেন। সাইন করবেন না। সাইন প্রিন্ট দেয়ার পরে কলম দিয়ে করতে হবে।
২। ছবিটা ল্যাব প্রিন্ট লাগবে। এম্বাসি গুলো ছবির ব্যাপারে খুব কঠোর। সব থেকে ভাল হয় এম্বাসি এরিয়ার আশেপাশে কিছু ল্যাব আছে। তারা সব এম্বাসির রিকয়ারমেন্ট জানে। ওদের থেকে তুলে নিলে। পুরানো ছবি দেয়ার চেষ্টা করবেন না।
৩। থাই এম্বাসিতে আমি আপওয়ার্ক প্রোফাইলের স্ক্রিনশট দিয়েছিলাম। আপনি চাইলে আপওয়ার্ক এর সার্টিফিকেট অফ আরনিংস বা ফাইবারের আরনিং স্টেটমেন্ট দিতে পারেন।
৪। ব্যাংক স্টেটমেন্ট ৬ মাসের। আপওয়ার্ক/ পেয়োনিয়ার টু ব্যাংক এর রিফ্লেকশন থাকতে হবে। ব্যালেন্স জন প্রতি ৭০ হাজার বা তার বেশি থাকতে হবে।
৫। পাসপোর্ট এর মেয়াদ নুন্নতম ৭ মাস হতে হবে। আগের পাসপোর্ট থাকলে সেটাও দিতে হবে।
৬। ফ্রিলেন্সার আইডি কার্ড যদি থাকে দিয়ে দেবেন। জরুরী না।
৭। ইউটিলিটি বিল, এনাইডি এর কপি সাথে করে নিয়ে যাবেন। দিয়েছিলাম কিনা মনে নেই।
৮। ভিসা ফর্মে রেফারেন্স হিসাবে একজনের বিস্তারিত দিতে হয়। আপনার প্রোফাইল যদি দুর্বল হয় তবে আপনার ব্যাপারে জানতে ওই নম্বরে এমব্যাসি থেকে যোগাযোগ করবে। কাছের মানুষের বিস্তারিত দেবেন যিনি কিনা ভালভাবে আপনার ব্যাপারে ইনফো দিতে পারবেন। প্রথমবার এপ্লাই করলে প্রায় সবার বেলায় যোগাযোগ করে। আমার বেলায় করেনি।
ভিসা এজেন্সি গুলোর ফ্রিলেন্সার ফাইলের প্রতি নেগেটিভ মন মানসিকতা দেখে কিছু বাড়তি কাগজ নিয়ে গিয়েছিলাম। এজেন্সি গুলোর সবাই বলেই দিয়েছিল এই ডকুমেন্ট এ ভিসা হওয়ার চান্স ২০% এর বেশী না। ফাইবারের ট্রানজেকশন স্টেটমেন্ট, টিন সার্টিফিকেট, পেয়োনিয়ার স্টেটমেন্ট, গত তিন বছরের ট্যাক্স ক্লিয়ারেন্স এর কাগজ নিয়ে গিয়েছিলাম। আমার নিজের একটা রেজিস্টার্ড এজেন্সি আছে। যদি এই কাগজে না হয় তাহলে ব্যবসায়ী ক্যাটাগরিতে এপ্লাই করব বলে সেই সকল কাগজ ও নিয়ে গিয়েছিলাম। এগুলোর কিছুই দরকার হয়নি। অযথা কারো কথা শুনে বিচলিত হবেন না।
সকল কাগজ নিয়ে গুলশান ১ এ নাভানা টাওয়ারের পেছনে সাইমন সেন্টরে চলে যাবেন ১১ টার ভিতর। এর পরে আর ওই দিনের সিরিয়াল নেয় না। থাই এম্বাসিতে সাইমন অথাবা ভিএসএফ গ্লোবালের মাধ্যমে ফাইল জমা করতে হয়। সরাসরি জমা দেয়ার সুযোগ নেই। টাকা নেবে ৪২৫০ টাকা। এর ভিতর ৩০০০ টাকা এমব্যাসি ফি আর ১২৫০ টাকা সাইমনের চার্জ। ওরা খুব হেল্পফুল। আপনার ফাইল খুব ভালভাবে চেক করে যদি কিছু লাগে তবে টাকা নেয়ার আগেই জানিয়ে দিবে। সুতরাং লস হওয়ার চান্স নেই।
> সাধারণত ৫ থেকে ৭ কর্মদিবসের ভেতর এমব্যাসি জানিয়ে দেয়। বাংলাদেশে ফ্রিলেন্সারদের অত একটা দাম না থাকলেও বাইরের মানুষ ভালই ইজ্জত করে। ফাইল জমা দেয়ার ৩৪ ঘণ্টা পর সাইমন থেকে মেসেজ পেয়েছিলাম "Your passport is ready for delivery"
**সিঙ্গাপুর এম্বাসি**
থাই ভিসা পাওয়ার পর সিঙ্গাপুরেরটাও নিজে এপ্লাই করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সিঙ্গাপুরের ভিসায় সবথেকে বড় সমস্যা ওই দেশের একজন নাগরিক থেকে ইনভাইটেশন লেটার লাগে। সাইমনের থাই ভিসা সাভিস দেখে তাদের মাধ্যমেই সিঙ্গাপুরের ভিসা এপ্লাই করে ছিলাম। গুলশান ১ এ পিজা ইন এর বিল্ডিং এর ৩ তলায় তাদের সিংগাপুর ভিসা এপ্লিকেশন সেন্টার। উপরের সব ডকুমেন্ট দিয়েছিলাম। **শুধু আপওয়ার্ক প্রোফাইল পেজের স্ক্রিনশট এর পরিবর্তে এইটায় দিয়েছিলাম ফাইবারের আরনিং স্টেটমেন্ট।** সময় লেগেছিল ৩ দিন। কোন কল বা ইন্টারভিউ নিতে চায়নি। সরাসরি ভিসা দিয়ে দিয়েছে। ভিসা ফি, ইনভাইটেশন লেটার এবং সাইমনের চার্জ সহ মোট খরচ ৪৫০০ টাকা।
**কুইক নোট **
টিকেটিং কিংবা হোটেল বুকিং এর জন্য নিজে নিজে অনলাইনে ট্রাই করবেন। বাংলাদশের এজেন্সি গুলো নিদিষ্ট কিছু এয়ার লাইন্স এর সাথে কন্টাকড করা। নিজে চেষ্টা করলে অনেক কমে পাবেন। আমি টিকেটিং এর জন্য স্কাই স্ক্যানার এবং হোটেল বুকিং এর জন্য বুকিং ডট কম ব্যাবহার করেছি।
থাইল্যান্ড কিংবা সিঙ্গাপুর কোথাও উবার নেই। গ্রেব ব্যাবহার করতে পারেন। উবারের কাছাকাছি বিল আসবে।
সিঙ্গাপুর খুবই এক্সপেন্সিভ। সব ব্যাপারে। প্ল্যান করার আগে চিন্তা করবেন।
ডলারের বাজার খুব অস্থির। বাংলাদেশ থেকে ডলার করে নিয়ে যাওয়ার থেকে ইবিএল, ব্যাংক এশিয়া স্বাধীন, ব্র্যাক ব্যাংক ম্যাট্রিক্স সহ যেই কার্ড গুলো ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্ট সাপোর্ট করে ওইগুলো ব্যাবহার করে সেই দেশের এটিএম থেকে টাকা তুললে খরচ ভাল কমবে।
**#freelancer #VISA #Thailand #thailandtravel #freelancervisa #shakil6700 #singapore**
Post a Comment