•                       শিক্ষনীয় মজার গল্প 

বাংলা চটি গল্প


ওর নাম ছিলো রেণু। আমি মজা করে বলতাম, 'কোন ফুলের রেণু রে তুই?' (শিক্ষনীয় মজার গল্প)


ও হাসতো। বলতো, তোর যে ফুলটা সবচেয়ে প্রিয়, সেই ফুলের।'


ক্লাসে সবচেয়ে চুপচাপ, ভদ্র মেয়ে ছিলো সে। মাঝে মাঝেই স্কুল কামাই দিতো যদিও। 


ওর বাবা মারা গিয়েছিলেন ও ছোট বেলাতেই। আমিও বাবাকে হারিয়েছি ছোটবেলায়। সে কারণেই কি-না, ওকে আমার আপন লাগতো। আমি যে দুঃখগুলো পুষে রাখতাম, আমার মনে হতো; ওই দুঃখগুলো রেণুর ও। কিংবা, বাবা হারানো রেণুর দুঃখগুলো আমার।  

(মজার গল্প বাংলা)


২০১২ সালের কথা, আমরা তখন ৯ম শ্রেণির ছাত্রছাত্রী। হুট করে শুনলাম রেণুর বিয়ে হয়ে গেছে। শুনে অবাক হয়েছিলাম। অতটুকুন বয়স, ওর বিয়ে হয়ে গেল! পরে অবশ্য নিজেকে প্রবোধ দিয়েছিলাম এই ভেবে যে, বাবাছাড়া একটা মেয়ে আর কতটুকুই বা একলা চলতে পারে! ওর মা হয়তো বিয়ে দিয়েই নির্ভার হতে চেয়েছেন।


২০১৪ সালে যখন মেট্রিক পরীক্ষা দেয়ার সময় এলো, রেণু তখন সন্তান সম্ভাবা। এসএসসি পরীক্ষা দিতে কেন্দ্রে যাবার আগে পরে সবার সাথে দেখা হতো। দেখা হতো রেণুর সাথেও। ধীরলয়ে হেঁটে হেঁটে সে আসতো তার মায়ের সাথে। দেখা হলেই বলতো, 'মুন্না ভালো আছিস?'


আমি বলতাম, 'ভালো আছি। তুই কেমন আছিস?' 

 

- ভালো আছিরে, কেমন পড়লি? দিন-রাত পড়িস, তাই না?


- আমার আর পড়া! সারাদিন কবিতা লিখি, বলতাম আমি।


'তুই তো প্লাস পাবি শিওর। আর দেখ, আমি ভালোভাবে পড়তেই পারছি না', বলে মুখ অন্ধকার করতো ও।


একদিন দেখলাম ওর হাতে মশার কামড়। মজা করে বললাম, নিজের হাত মশার কামড় থেকে বাঁচাতে পারিস না, বাচ্চা সামলাবি কীভাবে তুই?


আমার কথা শুনে হাসতো ও, সাথে হাসতো রেণুর মা, মাসুমার মা। মাসুমার মা বলতো, 'ঠিকই কইছেন বাবা, বাচ্চা একটা মেয়ে আবার বাচ্চা সামলাবে কীভাবে? ওর মা'কে সব দেখতে হবে।'


সেই রেণু মেট্রিক পাস করলো, বাচ্চা হলো। পড়াশোনা বাদ দিয়ে সংসারি হলো। দূরত্ব বাড়লো ওর সাথে সবার। বলেনা, চোখের আড়াল হলে মনের আড়াল হয়ে যায়? অমনই হয়েছিল সবকিছু। 


ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে আকাশসহ একবার রেণুর বরের বাসায় গেলাম। আমাদের দেখে সে কী খুশি। গিয়ে দেখি পুরোদমে সংসারি সে। তার পোষা মুরগী ডিম পেড়েছে। ছাগল পুষছে সে। পুরনো ঘর ঠিক কর নতুন করে বানিয়েছে। আরো কতো কী! বারবার বলছিলো, 'আমার মুরগী ডিম পেড়েছে। একটু দাঁড়া ভেজে আনি।'


কিন্তু, আমরা দাঁড়ালে তো!


ওটাই ছিলো শেষবার কাছাকাছি কথা বলা। তারপর, আরো কয়েকবার দেখা হয়েছে ক্ষণিকের জন্য। ঐ পথ দিয়ে যাবার সময় ৪/৫ বার দেখা হয়েছে। "কিরে কেমন আছিস" এর উত্তরে "ভালো আছি, তুই কেমন আছিস? বাচ্চা কেমন আছে?" বলাই হয়েছে বারবার। 


রেণু মারা যাবার ১ বছর হয়ে গেলো। গতবছর সেপ্টেম্বরের ৯ তারিখে রেণু মারা গেছে! বন্ধু আইনুলের কাছে যখন খবরটা শুনেছিলাম, তার ১ ঘন্টা আগেই রেণুর কবর দেয়া হয়ে গেছে!


লাস্ট কবে তাকে দেখেছি মনে পড়ে না আমার। ওর ব্লাড ক্যান্সার হয়েছিলো সেটাও জানিনা। ও মারা গেছে সে নিউজ ও পেয়েছি কবর দেয়ার ১ ঘন্টা পর। কী দূর্ভাগা আমি!! এ যে কী বেদনা। স্মৃতিপট থেকে বারবার ওর হাস্যোজ্বল মুখটা মনে করতে চাচ্ছি। কখনো পরিষ্কার মনে পড়ে। কখনো ঝাপসা হয়ে যায়। এই লেখাটা লিখতে কতো কষ্ট হচ্ছে!! কতোবার শুরু করেও শেষ করতে পারিনি। কী এক ব্যাথা। বন্ধুকে আরেকটাবার দেখতে না পারার, কথা বলতে না পারার!


ভালো থাকিস রেণু, ভালো থাকিস। পারলে, তোর পাষাণ বন্ধুদের ক্ষমা করে দিস।


#mdshakilahmmed

#shakil6700

Post a Comment

Previous Post Next Post